পূর্বাচলে হবে বাণিজ্য মেলা, থাকছে বাস সার্ভিস

টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২১ নভেম্বর ২৮, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) শুরু হচ্ছে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে সাজানো হবে মেলা প্রাঙ্গণ।

এছাড়া এবারই প্রথম দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকছে ৩০টি বিআরটিসি বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে বাসগুলো। এসব বাসে ন্যূনতম ২৫ টাকা ভাড়ায় দর্শনার্থীরা যাতায়াত করতে পারবেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আগামী ১ জানুয়ারি পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইপিবিকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি ১ জানুয়ারি থেকে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেন।

ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা শুরু হচ্ছে। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে মেলা সাজানো হচ্ছে। বাণিজ্য মেলার গেটের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। এবার গেটের থিমে প্রাধান্য পাবে ১০ মেগা প্রকল্প। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

স্টল বরাদ্দের জন্য টেন্ডার বাছাইয়ের কাজ চলছে জানিয়ে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক বলেন, বিশ্বব্যাপী যে সিস্টেমে মেলা হয়, এবারও তাই হবে। মেলার ভেতরে সেল স্ক্রিন দিয়ে ছোট ছোট স্টলগুলোর সীমানা দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে ডেকোরেশন করবে। করোনার জন্য এবার স্টলগুলোর মাঝখানে দূরত্ব বেশি রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় স্টল সংখ্যা কমানো হয়েছে।

তিনি বলেন, মিলনায়তনের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে ২২৫ থেকে ২৩০টি স্টল থাকবে। এতে করে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টলসহ ৩২টি ক্যাটাগরি রয়েছে। সাধারণ যেসব মেলা মিলনায়তনের মধ্যে হয়, সেখানে কখনো নিজের মতো করে স্টল দেওয়া যায় না। ফ্লোর খুঁড়ে তো আর স্টল করা যাবে না। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবে। এছাড়া আরো ১২-১৩টি স্টল থাকবে।

দর্শনার্থীদের জন্য বিআরটিসি বাস চালু করা প্রসঙ্গে মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত শাটল সার্ভিস চালু করতে বিআরটিসি আমাদের মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। রাস্তার দুই পাশে ১৫টি করে মোট ৩০টি বাস দিনব্যাপী চলাচল করবে। এখানে ন্যুনতম একটা ভাড়া থাকবে। ১২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য সম্ভাব্য ভাড়া হবে ২০-২৫ টাকা। ফ্রি সার্ভিস দিলে আশপাশের স্থানীয় লোকজন বেশি চলাচল করবে। তখন দর্শনার্থীদের চলাচল করা কঠিন হবে। এছাড়া মেলায় প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা এন্ট্রি ফি রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে মেলায় যাওয়ার ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে। এখন অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক হয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। যদি প্রধানমন্ত্রী সরাসরি যান, তাহলে এই সড়ক দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। এখন যে সময় লাগে, তখন আর লাগবে না। ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে মেলাকেন্দ্রে পৌঁছানো যাবে। নতুন জায়গায় কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা মেলার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি শেষ করতে পারবো।  

ইপিবি সূত্রে জানা গেছ, এবার করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাণিজ্য মেলার ভেতর পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রাখা হচ্ছে। প্রাণ, যমুনা, স্যামসাং, আবুল খায়ের, হোন্ডার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে স্টলের জন্য আবেদন করেছে। ভেতরে যে ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল আছে এরমধ্যে ২২টি বরাদ্দ হয়ে গেছে। নতুন মেলাকেন্দ্রে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। তবে মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। এছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।

জানা গেছে, পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে। এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার ও এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলে ৮০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথের আয়তন নয় দশমিক ৬৭ বর্গমিটার। এছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি-ফাংশনাল মিলনায়তন, ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ছয়টি মিটিং রুম, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, দুটি অফিস রুম, মেডিক্যাল রুম, ডরমেটরি-গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক এড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম ও ইনবিল্ট ইন্টারনেট।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতিবছর জানুয়ারির ১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এ মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে চলতি বছর বাণিজ্য মেলা হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


প্রধান সম্পাদক : Arka Hossain

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :

Epic Ettehad Point [Level-4] 618 Nur Ahmed Road Chattogram-4000.

 Newsroom : +88 01703 930636
 E-mail : faguntelevision@gmail.com

Copyright © 2021 www.fagun.tv । ফাগুন টিভি
Design & Developed by Smart Framework